Now is the wedding season. Many have received a wedding invitation or two. Let us talk a little about Hindu marriage today.
Bong 24 ডেস্কঃ এখন বিয়ের মরশুম চলছে। অনেকের কাছেই একটা বা দুটো বিয়ের নিমন্ত্রণ এসে গেছে। আসুন আজ আমরা হিন্দু বিবাহ নিয়ে একটু গল্প করি।
হিন্দু শাস্ত্র মতে কবে থেকে বিয়ে ব্যাপারটা শুরু হয় সেটা বলা বেশ কঠিন। তবে ধরা হয় ঋষি উদ্দালকের পুত্র ঋষি শ্বেতকেতু বিবাহের প্রবর্তক। এক ব্রাহ্মণ, ঋষি শ্বেতকেতু ও তাঁর বাবার সামনেই ঋষি শ্বেতকেতুর মায়ের হাত ধরেন। ঋষি শ্বেতকেতু এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত হন, যদিও সেই সময় কোন নারীকে কাছে পাবার জন্য বিবাহ আবশ্যক ছিল না। ঋষি শ্বেতকেতু বলেন "স্ত্রী সারাজীবন এক স্বামীর প্রতি অনুগত থাকবেন"। একেই বিবাহের সূত্রপাত বলে ধরা হয়। বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ছান্দোগ্য উপনিষদ ও কৌষীতকি তে এর বর্ণনা করা আছে।
এবারে চলুন জেনে নেওয়া যাক হিন্দু মতে বিয়ে বা বিবাহ কি রকম। সনাতন ধর্ম মতে আট প্রকারের বিবাহ হয়।
১. ব্রহ্ম বিবাহ -- বেদ পাঠরত কোন উপযুক্ত পুরুষকে পাত্র হিসেবে বিবেচনা করে কন্যাকে তার সঙ্গে বিবাহ দেওয়া। এই বিবাহে যৌতুকের কোন প্রশ্নই থাকেনা, যৌতুককে পাপ বলে গণ্য করা হয়। বিবাহের পর স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে থাকেন না। স্বামী তার বেদ শিক্ষা সম্পূর্ণ করে স্ত্রীকে নিজের কাছে এনে রাখতে পারেন। অর্থাৎ স্বামী, স্ত্রীর ভরনপোষনের উপযুক্ত হলেই এই বিবাহ সম্পূর্ণ করা সম্ভব।
২. দৈব বিবাহ -- এটিকে নিকৃষ্ট বিবাহ বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে কন্যার পরিবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপযুক্ত পাত্র না পেয়ে কুল পুরোহিতের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দেন।
৩. আর্য বা ঋতক বিবাহ -- কন্যাকে কোন ঋষি প্রথমে বিবাহ করে গোত্রান্তর করেন। এক বছর পর তার বেশি সময় সেই ঋষির সঙ্গে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার পর ঋষি ইচ্ছে করলে কন্যাকে অন্য কারো কাছে দান করতে পারেন। যাকে সেই কন্যাকে দান করবেন, তিনি কন্যাকে স্ত্রীর রূপে গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে ঋষি একটি পুত্রের কামনায় কন্যাকে বিবাহ করে এক বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। ঋষি অগস্ত্য-লোপামুদ্রার বিবাহ, এর একটি উদাহরণ। মহাভারতে এইরকম অসংখ্য গল্প আছে।
৪. প্রজাপত্য বিবাহ -- প্রজাপত্য একটি সংস্কৃত শব্দ। এখানে কন্যার পিতা বরের পরিবর্তে বরের পিতার হস্তে কন্যাকে সম্প্রদান করেন। এই রকম বিবাহের ব্যাখ্যা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, সে আলোচনায় যাব না।
৫. গান্ধর্ব বিবাহ -- এই রূপ বিবাহের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। একজন প্রেমিক ও প্রেমিকার স্বেচ্ছার মিলনকে গান্ধর্ব বিবাহ বলে ধরা হয়। রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার গল্প আমরা সকলেই জানি। গান্ধর্ব বিবাহের একটি আদর্শ উদাহরণ।
৬. অসুর বিবাহ -- পাত্রীর অনুমোদন বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাত্রীর পিতা যদি পাত্রীর বিবাহ দেন - অসুর বিবাহ। এক্ষেত্রে বর, পাত্রী পরিবারকে অর্থ প্রদান করে বিবাহের সম্মতি আদায় করে। এটা অনেকটা কনে কেনার মতন। এইরকম বিবাহ হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন সমাজে নিষিদ্ধ।
৭. পৈশাচ বিবাহ -- মনুসংহিতার চতুর্থ অধ্যায় এইরকম বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়।
"সুপ্তাং মত্তাং প্রমত্তাং বা বহো যত্রোপগচ্ছতি।
স পাপিষ্ঠ বিবাহানাং পৈচাচশ্চাষ্টমোহধমঃ।।"
অর্থাৎ যখন কোন পুরুষ কোন নারীকে হরণ করে বা ঘুমের মধ্যে অথবা কোন মাদক সেবন করিয়ে যৌন মিলন করে তাকে পৈশাচ বিবাহ বলে।
হিন্দু ধর্মের চারিটি বর্ণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্রের জন্য এরূপ বিবাহকে নিষিদ্ধ করা আছে। এই ধরনের বিবাহের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুরা উত্তরাধিকারী হয় না, এই ধরনের বিবাহকে অবৈধ বলে ধরা হয়।
৮. রাক্ষস বিবাহ -- যখন কোন কন্যাকে বলপূর্বক অপহরণ করে বিবাহ করা হয় এবং অপহরণ কালে কন্যার পরিবারের সকলকে লাঞ্ছিত অপমানিত বা হত্যা করা, তাকেই রাক্ষস বিবাহ বলে ধরা হয়।
বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাচার গাঁটছড়া, পুরোহিত গাঁটছড়া বাঁধার সময় একটি মন্ত্র পাঠ করেন, আসলে মন্ত্রটি উচিত বরের পাঠ করা। মন্ত্রটি কি এবং তার অর্থ কি, একটু জেনে নেওয়া যাক।
"পূষাত্বেভতো নয়তু হস্ত গৃহ্য শ্বিনৌ ত্বা প্রবাহতাগম রথেন
গৃহান গাছা গৃহপত্নী যথা সো বশিনীতবং বিদাথ মাবদাসী
সোমঃ প্রথমো বিভিদে গন্ডর্ভো বিবিদা উত্তরঃ
এতিয়ো অগ্নিষ্টেপতি স্তূরিয়স্তে মনুষ্যজঃ
সমো দদাদগমধরভয় গমধরভো দদগ্নায়ে
বায়ংসক পুত্রাগ শ্বচাদা দাগ্নি রহ্যা মাথো ইমাম।"
অর্থাৎ: হে বধূ! আদিত্য যেন তোমার হাত ধরে অগ্নিকুণ্ডের কাছে নিয়ে যান। অগ্নিকুণ্ডের কাছ থেকে আমি তোমাকে আমার গৃহে নিয়ে যাব। অশ্বিনী, বৈদিক যুগল দেবতা আমাকে সেই অনুমতি দিন। আপনারাও আমার গৃহে আসুন, যজ্ঞের মত আমার পরিবারের ঐতিহ্য সম্পর্কে আমাকে নির্দেশ দিন।
জন্ম নেয়া প্রতিটি কন্যা শিশুকে প্রথমে পালন করেন দেবতা সোম, পরবর্তী সময়ে গন্ধর্ব এবং দেবতা অগ্নি। বর, অগ্নি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সকল দেবতাকে তুষ্ট করে, কন্যাকে পত্নী রূপে বরণ করেন।
হে বধূ! সোম তোমাকে দান করেছিলেন গন্ধর্বকে, গন্ধর্ব দান করেছেন অগ্নিকে। আমি চতুর্থ যে আপনাকে পালন করতে চাই। অগ্নি তোমাকে এবং তোমার মাধ্যমে আমাকে বংশ ও সম্পদ দান করুন।
এবারে আরেকটি উপাচারের কথা বলি 'সপ্তপদী গমন'। সাতটি শপথের পদক্ষেপ। সংস্কৃতের কচকাচানি ছেড়ে গোদা বাংলায় পরপর সাতটি পদক্ষেপের মানে বলি।
প্রথম গমন -- খাদ্য ও পুষ্টির জন্য প্রার্থনা। আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে ঈশ্বরের সাথে আমরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে প্রথম পদক্ষেপ নিই। আজ থেকে আমরা খাদ্য ও পুষ্টির জন্য একসাথে চলবো।
দ্বিতীয় গমন -- শক্তির জন্য প্রার্থনা। আমরা সুখী হই এবং জীবন উপভোগ করি। আমরা একসাথে চলে শক্তিতে বেড়ে উঠবো।
তৃতীয় গমন -- সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা। আসুন আজ থেকে আমরা একসাথে আনন্দ ও বেদনা ভাগ করে নেবো। সম্পদের জন্য আমরা একসাথে চলবো।
চতুর্থ গমন -- পরিবারের জন্য প্রার্থনা। আজ থেকে আমরা বাবা-মা ও বড়দের যেন ভুলে না যাই। অন্যদের সুখ ও দুঃখের প্রতি আমাদের নজর সর্বদা রাখার জন্য আমাদের অঙ্গীকার।
পঞ্চম গমন -- বংশধরের জন্য প্রার্থনা। আমাদের বংশধর যেন সুস্থ, সবল, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান হয়। (এখানে কন্যা বা পুত্র সন্তানের কথা বলা নেই)
ষষ্ঠ গমন -- স্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা। আমরা সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য একসাথে চলবো। আনন্দে, দুঃখে একে অপরের হাত ধরে চলবো।
সপ্তম গমন -- ভালোবাসা বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের জন্য প্রার্থনা। আমাদের একে অপরের প্রতি ভালবাসা বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস যেন সারাজীবন অটুট থাকে।
আমার মনে হয় 'সপ্তপদী গমন' এর প্রথম গমন ভালবাসা বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের হওয়া উচিত। এই তিনটি একসঙ্গে থাকলে বাকিগুলোর জন্য বোধহয় শপথ নিতে লাগে না।
আজ এই অবধি থাক। আবার কোনদিন, অন্য কিছু নিয়ে গল্প করা যাবে।
COMMENTS